ব্রিটেনের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো শাসক রাজ সিংহাসন আরোহনের ৭০ বছর পূর্ণ করলেন। এ উপলক্ষে পুরো ব্রিটেন জুড়েই এখন সাজ সাজ রব। ব্রিটেনে এবং কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশে চার দিন ধরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলবে ‘প্লাটিনাম জুবিলি’ উদযাপন। এ উপলক্ষে বাকিংহাম প্যালেস প্রাঙ্গণে আসছেন লাখো মানুষ। দেখা মিলছে রানিসহ রাজপরিবারের সকল সদস্যদের।
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্লাটিনাম জুবিলির উদযাপন বৃহস্পতিবার শুরু হয় ট্রুপিং দ্য কালার নামের ঐতিহ্যবাহী সামরিক মহড়া দিয়ে। এতে অংশ নেন ১ হাজার ২০০ সৈন্য, ২০০ ঘোড়া এবং সেনাবাহিনীর শত শত বাদ্য-যন্ত্রশিল্পী। আর ফ্লাইপাস্টের মাধ্যমে রানিকে সম্মান জানায় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনী।
এসময় বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দা থেকে এ আয়োজন প্রত্যক্ষ করেন রানি। পরনে নীল রঙ্গের রাজকীয় পোশাক আর হাস্যজ্জ্বল রানি যেনো দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন। রানির সঙ্গে বাকিংহামের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন তার ছেলে যুবরাজ চার্লস, তার স্ত্রী ক্যামিলা, চার্লসের বড় ছেলে উইলিয়াম, তার স্ত্রী ক্যাথরিন ও তাদের তিন সন্তান। হর্স গার্ড প্যারেডে ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে আয়োজনে অংশ নেন রাজপরিবারের সদস্যরা। উৎসবে যোগ দিতে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে উড়ে এসেছেন প্রিন্স হ্যারি, তার স্ত্রী মেগান ও তাদের সন্তানরা। কিন্তু বারান্দায় তাদের দেখা যায় নি।
তবে, শুক্রবারের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বাকিংহাম প্যালেসের সামনে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ দেখার পর অসুস্থ বোধ করায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাকিংহাম প্যালেস থেকে জানানো হয়েছে, নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারের আয়োজন রানি খুব উপভোগ করেছিলেন এবং এটিকে একটি স্মরনীয় দিন বলে উল্লেখ করেছেন।
৯৬ বছর বয়সী রানি হলেন ব্রিটেনের দীর্ঘতম রাজত্বকারী শাসক এবং প্রথম ব্যক্তি যিনি সিংহাসনে ৭ দশকের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। একটানা ৭০ বছর ধরে সিংহাসনে আসীন রয়েছেন তিনি। ১৯৫২ সালে বাবা কিং জর্জেও মৃত্যুর পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন এলিজাবেথ। নানা নাটকিয়তায় মোড় নিয়েছে তার শাসনকাল। সিংহাসন কিংবা রাজ প্রাসাদের নানা ঘটনা সবকিছুর আলোচনার কেন্দ্রেই ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ শে এপ্রিল ১৯২৬। পিতা ডিউক অফ ইয়ক (রাজা ষষ্ঠ জর্জ) ও মাতা ডাচেস অভ ইয়র্ক (রানি এলিজাবেথ)-এর প্রথম সন্তান ছিলেন তিনি। তার মায়ের নাম অনুসারে তার নাম রাখা হয়। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। আর সে সময় ব্রিটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধীকারী ছিলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে সূদুর কেনিয়ায় বসে পিতার মৃত্যু সংবাদ শোনেন রানি এলিজাবেথ। সেই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেদিনি তিনি জেনে গিয়েছিলেন রানি হওয়ার সংবাদ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর মাথায় ওঠে রাজমুকাট। সে থেকেই ব্রিটেনের জনগণের হৃদয়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় রানি হয়েই কাটিয়ে দেন এতগুলো বছর।
১৯৪৭ সালে তিনি গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবার্গ ফিলিপকে বিয়ে করেন। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চার জন সন্তান রয়েছে। তারা হলেন, ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস, রাজকুমারী অ্যান, ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু এবং ওয়েলেক্সের আর্ল যুবরাজ এডওয়ার্ড। ২০২১ সালের ৯ই এপ্রিল স্বামী প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর পর খুব কমই জনসম্মুখে এসেছেন রানি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সফর করেছেন পৃথীবির বহু দেশে। বিবিসি জানিয়েছে, উনিশশো তিরাশি সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে একবার সফরে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। চার দিনের সরকারি সফরের একদিনে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীপুর, সেখান থেকে গাড়িতে করে বৈরাগীরচালায় যান রানি। রানির এই সফর এখনও গ্রামটির মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।
যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫ টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রানি এলিজাবেথ। ‘প্লাাটিনাম জুবিলি’ উপলক্ষে ব্রিটেনসহ কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশে চার দিন ধরে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে। ব্রিটিশ জনগণ এবং ব্রিটেনের বাইরেও বহু দেশের মানুষের কাছে রানির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটিশ জাতির ঐক্য আর ঐতিহ্যেও প্রতীক হচ্ছেন রানি এলিজাবেথ।